রংপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের অনুরোধে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন স্থগিত

হারুন-অর-রশিদ বাবু 

১৮ এপ্রিল ২০২৫, রাত ৮:৩৪ সময়
Share Tweet Pin it
[রংপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের অনুরোধে  হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন স্থগিত]

কালো তালিকাভুক্ত ইসলাম বিদ্বেষী সংগঠন হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধের দাবিতে, পূর্বঘোষিত  বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ। সাময়িক স্থগিতে তৌহিদী মুসলিম জনতার জরুরী সংবাদ সম্মেলন। 

রংপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের অনুরোধে, দেশের কালো তালিকাভুক্ত ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী সংগঠন হেযবুত তওহীদের  সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবিতে পূর্ব-ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ সাময়িক  প্রত্যাহার করেছে রংপুরের তৌহিদী মুসলিম জনতা। 

১৮ এপ্রিল শুক্রবার বাদ জুম্মা রংপুরের পীরগাছা উপজেলাধীন পারুল ইউনিয়নের নাগদাহ কেরামতিয়া ঈদগাহ মাঠে, তৌহিদী মুসলিম জনতার ব্যানারে অনুষ্ঠিত এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে, সন্ত্রাসী সংগঠন হেজবুত তওহীদ কতৃক রংপুরের পীরগাছায় স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নামে দায়েরকৃত ধারাবাহিক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ইসলাম বিদ্বেষী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবিতে ১৮ এপ্রিল বাদ আসর বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ সাময়িক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন স্থানীয় নেতারা। 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, হেযবুত তওহীদের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের মাধ্যমে জনগণকে জানাতে চাই। হেযবুত তওহীদ কর্তৃক এলাকাবাসির উপর যে অতর্কিত হামলা। পরে একে একে ছয়টি মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি ছিল এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষদের অংশগ্রহণে। কিন্তু রংপুর পুলিশ সুপার আবু সায়েম, পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও নাজমুল হক সুমন, পীরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি নুরে আলম সিদ্দিকীর অনুরোধে পুর্ব ঘোষিত সমাবেশটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। 

এর আগে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রভাবশালী নেতা মনতাজ আলী জিল্লালের নেতৃত্বে তার বাড়িতে হেযবুত তওহীদের একটি সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন। তার সহযোগিতায় ছোট ভাই হেযবুত তওহীদের রংপুর বিভাগীয় আমির আব্দুল কুদ্দুছ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকেই বিভিন্ন জেলা হতে তাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে আসেন। তাদের অনুষ্ঠানগুলোতে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও অংশগ্রহণ করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকেই তাদের অনুষ্ঠানস্থলে অনেক নারী-পুরুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করে এলাকাবাসী। নারী-পুরুষ অবাধে মেলামেশার দৃশ্য স্থানীয় সাধারণ মুসলিম জনতা মেনে নিতে পারেননি। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে যেন এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট না হয় সেজন্য ওই রাতে স্থানীয়রা পীরগাছা থানার ওসিকে বিষয়টি অবগত করেন। ওসি রাতেই এলাকাবাসীকে নিশ্চিত করেন পরের দিন ২৪ ফেব্রুয়ারী হেযবুত তওহীদ ইসলাম বিদ্বেষী কোন কর্মকান্ড করতে পারবে না। কিন্তু পরের দিন দেখা যায় হেযবুত তওহীদ তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ না করে উল্টো বড় বড় সাউন্ড বক্স এনে ব্যাপক ভাবে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু করেন। এ অবস্থা দেখে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে  হেযবুত তওহীদের নেতাকর্মীদের বুঝানোর জন্য সমাবেশস্থলে যান স্থানীয় মাওলানা মিজানুর রহমান ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নুরুল আলম। সমাবেশস্থলে পৌঁছামাত্র পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হেযবুত তওহীদের নেতাকর্মীরা স্থানীয়দের উপর চড়াও হয়ে উঠেন। ওইদিন দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন, সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) আসিফা আফরোজ আদরী, থানা ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী, ডিবি পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাদের সাথে এলাকাবাসি সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করতে উপস্থিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রবিউল ইসলাম আরও জানান, উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে যদি এলাকাবাসির নামে বারবার মামলা হয় তাহলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কেন কোন মামলা হলো না। কারণ ওই সময়ে এলাকাবাসির সাথে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন। 

রবিউল ইসলাম আরও বলেন, প্রায় একমাস পুর্বে হেযবুত তওহীদ ও তৌহিদী মুসলিম জনতার চলমান ঘটনা মিমাংসার লক্ষে, হেযবুত তওহীদের প্রতিনিধি হিসেবে, পীরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা এবং পীরগাছা থানার ওসি স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মামলা করতে নিষেধ করেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তাদের কথা মতো আমরা থেমে গেলে এলাকার নিরহ মানুষের নামে ৫ টি মামলা করেন তারা। আমরা মনে করি হেযবুত তওহীদের প্রতিনিধিরা হয়তো টাকা খেয়েছে, নয়তো তারা যাদের প্রতিনিধি হয়েছে তারা এদেরকে কোন মূল্যায়নই করেনা! সংবাদ সম্মেলনকালে বিভিন্ন মসজিদের ঈমাম মুয়াজ্জিনসহ অত্র এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক তৌহিদী মুসলিম উপস্থিত ছিলেন। 

এবিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর পুলিশ সুপার আবু সায়েম জানান, এলাকাবাসির কর্মসূচি স্থগিত রাখতে বলেছি। শুধু আমি নই জেলা প্রশাসকসহ উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সাথে নিয়ে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে।