কৃষকের বাড়ি ও পারুল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি
রংপুরের পীরগাছার পারুল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউলের নেতৃত্বে জমি দখল করতে কৃষকের ঘরবাড়িতে আগুন ও ভাংচুর করে লুটপাট করা হয়েছে। এঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে থানায় মামলা করায় ভুক্তভোগী কৃষককে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী। এর আগে গত ৩ এপ্রিল ভুক্তভোগী কৃষক মোসলিম মিয়া বাদী হয়ে এজাহারনামীয় ১৪ জনসহ অজ্ঞাত ২০/৩০ জন বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের আনন্দি ধনিরাম এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর পুত্র কৃষক মোঃ মোসলিম মিয়ার সঙ্গে ৬৫ শতক জমি নিয়ে প্রতিবেশী আজিজুর খানের পুত্র আলম খান গং এর সঙ্গে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলমান। ইতিপূর্বে গত বছরে বিরোধপূর্ণ জমি থেকে রাতের বেলা কৃষক মোসলিম মিয়ার ধান চুরি করে কেটে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আলম খান গং এর বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে গত ২৯ মার্চ রাত ১২.৩০ টার সময় ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে পারুল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রদলের পারুল ইউনিয়ন সভাপতি মেহেদী হাসান, ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি শফিউদ্দিন শফি, উপজেলা শ্রমিক দলের সেক্রেটারি এনামুলসহ আনন্দি ধনিরাম এলাকার মোঃ আজিজুর রহমান, মোঃ আবু বকর খাঁন, মোঃ মামুন, মোঃ আলম, মোঃ বিপ্লব,বিরাহিম এলাকার মোঃ আফজাল হোসেন, মোঃ আমিনুল , দেউতি এলাকার মোঃ তাইজুল ইসলাম, মোঃ আফজাল হোসেন, মোঃ আজাদ মিয়াসহ অজ্ঞাত ২০/৩০ জন দলীয় নেতাকর্মীরা ধারালো ছোরা, চাইনিজ কুড়াল, লাঠি, লোহার রড, দিয়াশলাই ইত্যাদি হাতে নিয়া কৃষক মোসলিম মিয়ার বাড়ির লোকজন ঘুমন্ত থাকাকালে বসত বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে উত্তর দুয়ারী ঘরে আগুন লাগাইয়া দিলে আগুনের লেলিহান শিখা দেখার পর কৃষক মোসলিম ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘর হতে বাহির হলে বিএনপি নেতা রেজাউল হুকুম দিয়া বলে যে, শালাকে মেরে জীবন শেষ করিয়া দাও এবং বাড়ী ঘর পুড়িয়া ছাই করে দাও। এরপর ভাংচুর ও লুটপাট করে দুই লক্ষ সত্তর হাজার টাকার ক্ষতিসাধন করে। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের আঘাতে কৃষক মোসলিমের ভাতিজা আশিকুর রহমান গুরুতর আহত হলে প্রথমে পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে।
এদিকে আগুনের লেলিহান শিখা ও ভুক্তভোগীদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে বিএনপি নেতাকর্মীরা চলে যায়। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কল দেয়ার দুই ঘন্টা পর পীরগাছা থানা পুলিশ বিএনপির পারুল ইউনিয়ন সভাপতি রেজাউলসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চলে যায়।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষক মোঃ মোসলিম মিয়া জানান,বিএনপির পারুল ইউনিয়ন সভাপতি রেজাউল এর নেতৃত্বে আমার বসতবাড়ি উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে পুড়িয়ে দেয়া হলো, লুটপাট করা হলো। এঘটনায় মামলা দায়ের করার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করলো নাহ। এখন শুনতেছি ওদের থানা সভাপতি রাঙ্গা ওসিকে চাপ দিছে কেনো এই মামলা থানায় হলো। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদিকে নেতা রেজাউল আমাকে হুমকি দিতেছে। মামলা করে আমাদের বিএনপির নেতাকর্মীদের কিছুই করতে পারবি নাহ। এখন যদি তোকে মেরে ফেলে কি করবি? ঘটনার সত্যটা আছে জন্যইতো ওরা এতো ক্ষমতাবান হওয়ার পরেও পুলিশ মামলা নিছে। কিন্তু এখন দেখতেছি আমি হয়তো আর ন্যায় বিচার পাবো নাহ। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি সরকারের কাছে ন্যায্য বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির পারুল ইউনিয়ন সভাপতি রেজাউল ইসলাম রাজ্জাক জানান, মোঃ মোসলিমের করা মামলায় ১৪ জন আসামিই আমাদের বিএনপির পরীক্ষিত নেতাকর্মী। আমি এবিষয়ে কিছুই জানতাম নাহ। মামলায় আমার নাম ও বাপের নাম ভুল আছে। তাই আমি বলছি এই ব্যক্তি আমি নাহ। ঘটনার দিন পুলিশ এসে সাথে করে আমাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গেছলো। পরে দেখি আমার নামে মামলা হয়েছে। আমার দলীয় নেতাকর্মীরা এটা নিয়ে অনেক কিছু করতে চাইছিলো। আমি করতে দেইনি। থানা নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছি তারা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছে। আমি চাইলে বাদীকে অনেক কিছু করতে পারি। কিন্তু আমি আইনে বিশ্বাসী। এটি একটি মিথ্যা মামলা। এই মামলার অভিযোগপত্র থেকে খালাস পাবো। আমার বিরোধী গ্রুপ বর্তমান নির্বাচিত দলীয় কমিটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এই ষড়যন্ত্র করেছে।
বিএনপির পীরগাছা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ডালেজকে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন,এবিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। তুমি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করো। আর মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি নাহ।
এবিষয়ে পীরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা জানান, ঘটনা জানার পরেই আমি খোঁজ খবর নিয়েছি। আমার ইউনিয়ন সভাপতি রেজাউল এই ঘটনায় জড়িত ছিলো নাহ। অন্য কোন দলীয় নেতাকর্মী জড়িত ছিলো কিনা সেটা আমার জানা নেই। আমরা প্রশাসনকে কোন রকম চাপ প্রয়োগ করিনি। যারাই অভিযুক্ত আছে তাদের নামে প্রশাসন চার্জশিট করে আদালতে জমা দিক। এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।
পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী জানান,বসতবাড়িতে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের রয়েছে। এবিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। এঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে। আমাদের উপরে কোন রাজনৈতিক চাপ নেই।