রংপুরে পরকিয়ার জেরে স্বামীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ স্ত্রীর বিরুদ্ধে

হারুন-অর-রশিদ বাবু

৮ এপ্রিল ২০২৫, রাত ১১:৬ সময়
Share Tweet Pin it
[রংপুরে পরকিয়ার জেরে স্বামীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ স্ত্রীর বিরুদ্ধে]

বামে নিহত শরীফুলের ফাইল ছবি, ডানে সদ্য তোলা ছবি। 

রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকার এক বাসের সুপারভাইজারকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে।এঘটনায় ওই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকালে স্ত্রীর পরকীয়া নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার পরে ঢাকার সাভার মডেল থানা স্ট্যান্ড এলাকার ভাড়া বাসায় শ্বাসরোধ করে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে রংপুর নগরীতে নিজ বাড়িতে লাশ এনে তাড়াহুড়ো করে দাফন চেষ্টা করেছে স্ত্রী ফাতেমা আক্তার শিউলি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত( সন্ধ্যা অবধি) লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের প্রস্তুতি চলছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ থানাধীন মহিন্দ্রা উত্তরপাড়া এলাকার মকবুল হোসেনের পুত্র শরিফুল(৩০) ঢাকার সাভার এলাকায় সুপারভাইজারের কাজ করতো। পেশাগত কারণে ঢাকার সাভার মডেল থানা স্ট্যান্ড এলাকার আনন্দপুর ফকিরটারিতে বাসা ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছে। গত রবিবার রাতে ঈদের ছুটি শেষে ঢাকার সাভারে স্বামীর ভাড়া বাসায় যায় স্ত্রী ফাতেমা আক্তার শিউলি। সোমবার রাতে হঠাৎ শরিফুল মুঠোফোনে তার বোন রাণী বেগমকে জানায় 'আমি বউ এর এত নির্যাতন সহ্য করতে পারছি নাহ' বলেই ফোন কেটে দেয়। তারপরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৫ টায় হঠাৎ শরিফুলের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার শিউলি মুঠোফোনে রাণীকে জানায় শরিফুল আত্মহত্যা করেছে। পরবর্তীতে সাভার থেকে গ্রামের বাড়িতে লাশ এসে পৌছলে গলায় স্পষ্ট আঘাতের ধরন দেখে এলাকাবাসী মন্তব্য করে, আত্মহত্যা নয় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে শরিফুলকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় জানায়,লাশ এনেই শরিফুলের বউ বলে ওড়না দিয়ে জানালার গ্রিলের সাথে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে শরিফুল। ওড়না দিয়ে আত্মহত্যা করলে গলায় এতো গভীর জখমের চিহ্ন কেনো এলাকাবাসী এমন প্রশ্ন করলে নিজের কথা পাল্টিয়ে ফাতেমা আক্তার শিউলি বলেন,ওড়না নয় রশি বেলকুনির জানালার গ্রিলে পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে শরিফুল।

স্থানীয় মন্দিরা মধ্যপাড়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন আহম্মদ আলী ও সর্দারটারী জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. সোহরাব মিয়া, অভিযোগ করে বলেন ৩০/৩৫ বছর ধরে গ্রামের কেউ মারা গেলে আমরা লাশ ধোয়াই, কিন্তু মৃত্যু ব্যক্তির গলায় এমন দাগ দেখিনি। শরীফুলের গলায় চেইন (লৌহদ্রব্য) দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এটার সঠিক বিচার চাই। 

স্থানীয় মাহফুজার রহমান জানান, এই মহিলার (শরিফুলের স্ত্রী) অনেকদিন ধরেই পরকীয়ার সম্পর্ক ছিলো। পরশুদিনে ঈদের ছুটি কাটে এই মহিলা ঢাকা যাওয়ার পর স্বামীর হাতে পরকীয়া ধরা পড়ার ফলে গলায় চেইন পেচাইয়া শ্বাসরোধ করে শরিফুলকে হত্যা করেছে। এটা আত্মহত্যা নয় হত্যা। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে আর কেউ এমন অপরাধ করার সাহস না পায়।

এবিষয়ে মরদেহ গোসলকারী মুয়াজ্জিন আহমদ আলী জানান,আমি ত্রিশটির উপর মরদেহ গোসল করাইছি।জীবনে গলায় এমন আঘাত এলা মরা ধোয়াই নাই। যদি রশি কিংবা ওড়না দিয়ে ফাঁস দিতো তাহলে এমন জখম হইতো নাহ। এটা নিশ্চিত হত্যা। শ্বাসরোধ করি হত্যা করা হইছে এটা আঘাতের জায়গা দেখিয়ায় বুঝা যাইতেছে।আমরা এই মহিলার বিচার চাই।

এবিষয়ে অভিযুক্ত ফাতেমা আক্তার শিউলি হত্যার কথা অস্বীকার করে বলেন,গতকাল দুপুর বেলা আমাক হঠাৎ আসি বলে তুই কার সঙ্গে ঘুরিছ,কার সঙ্গে খাইছ,আমি সব জানি। এই বলে ঝগড়া শুরু করে। আমি তারে বলি হুদাই আমার নামে অভিযোগ দিবানা। যেদিন হাতেনাতে ধরবা সেদিন কইয়ো। এরপর রাগ করি বাসা থাকি বের হয়ে যায়। রাতে আসিয়া আবার ১ টার দিক ঝগড়া করি গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হছলো। আমি কইছি আমাক নিয়ে যাও। বাসা ভাড়া,গ্যাস বিল,বিদ্যুৎ বিল আমি কিভাবে দিবো। এরপরে যাওয়ার চেষ্টা করলে দারোয়ান দরজা খুলি না দিলে আবার বাসায় আসিয়া বেলকুনিতে যায়া সিগারেট খাওয়া শুরু করে। আমি ঘুমাইয়া পড়লে জাগনার পর বেলকুনি যায়া দেখি গ্রিলের সঙ্গে ওড়না পেচাইয়া দাড়াইয়া আছে পা জুতাসহ নিচের মেঝেত লাগানো ছিলো। আমি ওড়না টান দেয়ার সাথেই ধড়াস করি পড়ি যায়। পরে পাশের ফ্লাটে থাকা আমার জাও আদুরিকে চিল্লাইয়া ডাকি। তারপরে গ্রামের বাড়িতে লাশ নিয়ে আসি।

এবিষয়ে জানতে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আব্দুল মজিদকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেনি, মাহিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোঃ আব্দুল কুদ্দুস জানান, এমনিতেই ঢাকার সাভার থানা এলাকার ঘটনা। তার উপর মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কোন লিখিত অভিযোগ দেইনি। তাই আমরা কোন পদক্ষেপ নেইনি। অভিযোগ না পেলেও হত্যার ঘটনায় স্বপ্রণোদিতভাবে আইনগতভাবে পুলিশের ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে কিনা প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি জানান, মৃতের পরিবার অভিযোগ না দিলে আমাদের করার কিছুই নেই।

রংপুর জজকোর্টের এ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম জানান,কোন মাধ্যমে কোন এলাকায় অপরাধ সংঘটিত হওয়ার খবর পেলেই প্রশাসন স্বপ্রণোদিতভাবে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। লিখিত অভিযোগের অজুহাতে ওসি সুকৌশলে হত্যাকান্ডের ঘটনার ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়ে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে।