মিঠাপুকুরে প্রশাসনিক নীরবতায় চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব

হারুন-অর-রশিদ বাবু 

২১ মার্চ ২০২৫, রাত ১২:৪৯ সময়
Share Tweet Pin it
[মিঠাপুকুরে প্রশাসনিক নীরবতায় চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব]

রংপুরের মিঠাপুকুরে প্রশাসনের নীরবতায় চলছে অবৈধ বালুর রমরমা ব্যবসা -ছবি নতুন স্বপ্ন। 

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় প্রশাসনিক নীরবতায় ধুম চলছে  অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব। অভিযোগ রয়েছে উপজেলা প্রশাসনকে অভিযোগ দেয়ার পরেও নেয়া হচ্ছে না কোন ব্যবস্থা। পুরো উপজেলায় প্রায় অর্ধ শতাধিক পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন ও কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার ভাংনী ইউনিয়নের বেতগাড়া গ্রামের সালামের ঘাট সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ঘাঘট নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে ওই এলাকার কুরফানের ছেলে রমজান।

অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করাতেই অবৈধ বালু উত্তোলনকারী রমজান প্রতিবেদককে বলেন, চেয়ারম্যান,মেম্বার,থানা পুলিশ,ইউএনও অফিস,এসিল্যান্ড অফিস,ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে অনুমতি নিয়েই গত ১৪ দিন থেকে বালু উত্তোলন করছি। আপনি প্রশ্ন করার কে ?

এবিষয়ে ভাংনী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান,আমরা কাউকে অনুমতি দেয়ার অথরিটি নই। আমার ইউনিয়নে সালামের ঘাটে বালু উত্তোলন সম্পর্কে আমি অবগত নই।

এদিকে ভাংনী ইউনিয়ন ছাড়াও উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নের বুঝরূক তাজপুরে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে তিন মাস থেকে বালু উত্তোলন করছে শাহ আলম। এবিষয়ে ক্ষতিগ্রস্তের শিকার স্থানীয় মোঃ আবুল হোসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরেও নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। একই ইউনিয়নের সাতভেন্টি এনায়েতপুরে গত এক মাস থেকে পুকুর ও আবাদী জমির মাটি ভেকু লাগিয়ে ড্রাম ট্রাকে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। এতে সাতভেন্টি গ্রামের ১ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। উপজেলার বালুয়া_মাসিমপুরে আশ্রয়ন প্রকল্প সংলগ্ন যমুনেশ্বরী নদীর বুক চিরে চলছে বালু উত্তোলন।এতে হুমকিতে পড়েছে আশ্রয়ন প্রকল্প।

এছাড়াও চেংমারি ইউনিয়নের কাশিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয় সংলগ্ন আবাদি জমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন আওয়ামীলীগ নেতা সেলিম মন্ডল এবং জেলা পরিষদের সদস‍্য হারুনুর রশিদ। এতে হুমকিতে পড়েছে আশেপাশের আবাদী জমিগুলো। স্থানীয়দের অভিযোগ, হারুনুর রসিদ এবং সেলিম মন্ডল আওমীলীগ নেতা হওয়ার পরেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কৃষি জমির টপ সয়েল অবৈধভাবে বিক্রি করছে।

এদিকে লতিবপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাপুরের ভাংগা স্কুল সংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘ একমাস ধরে আবাদী জমির টপ সয়েল বিক্রি করছে বালু ব‍্যবসায়ী নাজমুল। এতে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে চলাচলের রাস্তাঘাট ও দূর্ঘটনার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের। একই ইউনিয়নের মামুদপুরে ভেকু ও ট্রলি যোগে মাটি বিক্রি করছেন লেবু মিয়া। এতে আবাদী জমি ও রাস্তাঘাট বিলীন হচ্ছে।এছাড়াও জায়গীর বাজার সংলগ্ন কাফ্রিখাল ইউনিয়নে আবাদী জমিতে ভেকু দিয়ে ট্রাক্টর যোগে কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রি করছে বালু ব‍্যবসায়ী শাহীন (ভাংরী)।

অবৈধ বালু উত্তোলন ও কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পাশ্ববর্তী কৃষি জমির স্বাত্বাধিকারী একাধিক ভুক্তভোগী জানান, উপজেলা প্রশাসনকে বেশি চাপ দিলে লোক দেখানো অভিযানে এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বালু উত্তোলনকারীদের সতর্কবার্তা দিয়ে যান। কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর অভিযোগকারীকে হুমকি ধামকি দিয়ে ও যেকোনভাবে ম্যানেজ করে আবারো শুরু হয় বালু উত্তোলন।এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে আসার আগেই বালু ব্যবসায়ীরা এসিল্যান্ড ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে সাময়িক সময়ের জন্য চলে যান আত্মগোপনে। এভাবেই চোর পুলিশের খেলার মতো প্রশাসনের ছত্রছায়ায় চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন ও কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রির চলছে মহোৎসব।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, টপ সয়েল হলো জমির উৎকৃষ্ট প্রাণ। জমির উপরের ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত মাটিকে সাধারণত উর্বর অংশ (টপ সয়েল) বলা হয়। মূলত ওই অংশেই থাকে মূল জৈবশক্তি। কৃষকরা জমির টপ সয়েল বিক্রি করে নিজেদের পায়েই কুড়াল মারছেন। টপ সয়েল বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মিঠাপুকুর উপজেলায় প্রশাসনের নীরবতায় টপ সয়েল বিক্রির মহোৎসব চলছে।

মিঠাপুকুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মুলতামিস বিল্লাহ জানান,অভিযোগ পেলেই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে থাকি। অভিযানে যাওয়ার আগেই তার অফিস থেকে কিভাবে অভিযানের খবর বালু উত্তোলনকারীদের কাছে চলে যায় এমন প্রশ্নে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, এবিষয়ে আমার অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র জানান, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলায় অভিযান চলমান রয়েছে। ভাংনীতে ঘাঘট নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানা ছিলো নাহ।এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।